Author : Kabir Taneja

Published on Oct 15, 2024 Updated 0 Hours ago

পেজেশকিয়ানের বিজয় আয়াতুল্লাহ এবং আইআরজিসি উভয়ের জন্যই একটি তিক্ততার কারণ হতে পারেতবে নির্বাচনের সাফল্য এই অঞ্চলে এবং ইসলামি বিশ্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানে ক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক সাদাসিধে ‘সংস্কারপন্থী'

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অকালমৃত্যুর কারণে ইরানে হওয়া নির্বাচনের ফলাফল বিস্ময়কর সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেছেন। ১৯৭৯ সালের পর থেকে এই নির্বাচনে সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোট পড়েছিল।

পেশায় ডাক্তার পেজেশকিয়ান এমন সময়ে তাঁর নতুন ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, যখন দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক স্তরে ইরান একাধিক সংঘর্ষের মোকাবিলা করছে। তেহরানের দক্ষিণে ইমাম খোমেনির সমাধিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আরও বড় পরীক্ষা রয়েছে। যাঁদের কথা এত দিন শোনা হয়নি, এ বার তাঁদের কথা শুনব। আমি সরকারের সব শাখাকে একত্রিত করার চেষ্টা করব।’

পেশায় ডাক্তার পেজেশকিয়ান এমন সময়ে তাঁর নতুন ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, যখন দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক স্তরে ইরান একাধিক সংঘর্ষের মোকাবিলা করছে।

বাই কি প্রেসিডেন্টেরই সমর্থনকারী?

ইরানের রাজনীতি বহু স্তরবিশিষ্ট এবং বহুমুখী। রাষ্ট্রের জন্য সুপ্রিম লিডার (আয়াতুল্লাহ) আলি খোমেইনি এবং সর্বশক্তিমান ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) – এমন একটি প্রাথমিক সামরিক সত্তা, যারা সরাসরি আয়াতুল্লাহকে রিপোর্ট করে – ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে প্রধান শক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে পশ্চিম-সমর্থিত পহলভি রাজবংশের পতন হয়। যাই হোক, শিয়া ইসলামের ক্ষমতার আসনটি কয়েক দশক ধরে একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া বজায় রেখেছে, যা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে যে, ইরানিরা আসলে তাদের নিজস্ব প্রশাসন বেছে নেয় এবং একই সঙ্গে তাদের আরব প্রতিবেশী দেশে প্রচলিত রাজতন্ত্রের তুলনায় নিজেকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো হিসাবে তুলে ধরে।

পেজেশকিয়ানের বিজয় সম্ভবত আয়াতুল্লাহ এবং আইআরজিসি-র জন্য তিক্ত বাস্তব। এই নির্বাচনে ছজন পরীক্ষিত এবং নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে শুধুমাত্র পেজেশকিয়ান একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রচারে বিশ্বে ইরান সম্পর্কে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে পাশ্চাত্যের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নারীর অধিকার রাষ্ট্রের নীতি-পুলিশ দ্বারা হিজাবের প্রয়োগের মতো আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঘরোয়া সমস্যাগুলির কথা তুলে ধরা হয়েছে। পেজেশকিয়ান নির্বাচনী লড়াইতে নতুন নন এবং যথাক্রমে ২০১৩ ও ২০২১ সালে চেষ্টা করে শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতার পদে আসীন হতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই সময় তিনি আপাতদৃষ্টিতে ইরানের সেই তরুণ জনসংখ্যার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে সমর্থন পেয়েছিলেন, যাদের গড় বয়স মাত্র ৩২। কারণ মার্কিন প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি র্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে এবং বছরের পর বছর ধরে বিচ্ছিন্নতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেজেশকিয়ানের এই জয় উল্লেখযোগ্য। কারণ এই লড়াইয়ে তিনি আইআরজিসি সমর্থিত কট্টরপন্থী প্রার্থী মোহাম্মদ বাবের কালিবাফকে প্রথম প্রধান নির্বাচনে পরাজিত করেন এবং পরে বিকল্প প্রার্থী সাঈদ জালিলিকে পরাজিত করতে সক্ষম হন।

এই নির্বাচনে ছজন পরীক্ষিত এবং নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে শুধুমাত্র পেজেশকিয়ান একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী ছিলেন।

কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, কিছু প্রচলিত আখ্যান সত্ত্বেও পেজেশকিয়ানের বিজয় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে না এবং তিনিও কোনও ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করতে পারবেন না। তিনি ক্ষমতার অলিন্দে পরিচিত ব্যক্তি এবং তাঁদের সমর্থন ছাড়া তাঁর প্রার্থীপদের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণই হত না।

ধারাবাহিকতা এবং ইরানের বিদেশনীতি

ইরানে এই বলপূর্বক ক্ষমতার পরিবর্তন একটি অনিশ্চিত সময়ে ঘটেছে। প্রতিরোধের সন্ধানে তেহরানের ফরওয়ার্ড ডিফেন্স নীতি সিরিয়া এবং ইরাকের মতো রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুতিদেপ্রতি সমর্থনে ইরানকে প্ররোচিত করেছে, যেহেতু দেশটি ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে লড়াই করছে। ২০০৮ সালের এক বক্তৃতায় খোমেইনি বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে কৌশলগত গভীরতা দান করে। বেশ কিছু দিক থেকে এই কৌশল ধারণাগত ভাবে পুরনো হলেও আইআরজি-সি নেতা এবং কুদস ফোর্সের (আইআরজিসির অভিজাত বিদেশি কার্যকর শাখা) প্রধান নিহত কাসেম সোলেইমানি নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে ওঠে২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে একটি মার্কিন ড্রোন হামলায় সোলেইমানি নিহত হন।

পেজেশকিয়ানের বৈদেশিক নীতির অভিজ্ঞতা কম, অনেকটা তাঁর পূর্বসূরি রাইসির মতো। ইরানের রাষ্ট্রপতিত্বের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি এবং সীমাবদ্ধতা বিদেশনীতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রশাসন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনসাধারণের সেবা প্রদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আদর্শগত আধিপত্য রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সাধারণ ভাবে রাষ্ট্রপতিত্ব অন্তর্মুখী। তবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত পি৫+১ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপক প্রচেষ্টা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি - যা জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত - ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ইরানের কট্টরপন্থীদের উৎসাহিত করেছিল এবং মধ্যপন্থী ও সংস্কারপন্থীদের অবস্থানের অবনতি ঘটিয়েছে। এই প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ানের জয় উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনসাধারণের সেবা প্রদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আদর্শগত আধিপত্য রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

যাই হোক, আয়াতুল্লাহ এবং সম্ভবত ক্রমবর্ধমান আইআরজিসি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইরানের বৈদেশিক নীতির মূল নকশা অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা, ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স এবং চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে জোট গঠন। এ ক্ষেত্রে নতুন প্রেসিডেন্টের বলার বিশেষ জায়গা নেই। এর পিছনে রয়েছে দু’টি কারণ: প্রথমটি অবশ্যই রাজনৈতিক যেখানে ১৯৭৯ সালে সংঘটিত বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার সমন্বিতকরণ ঘটে। দ্বিতীয়টি অনেক বেশি কৌশলী এবং এটির মূল প্রোথিত রয়েছে ইরান-ইরাক যুদ্ধে, যেটি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এই সংঘাতটিকে ইতিহাসের বইতে খাটো করে দেখা হলেও ইরানের কৌশলগত চিন্তাভাবনার উপর এর প্রভাব ছিল অপরিসীম। কারণ যন্ত্রাংশ, গোলাবারুদ বা যন্ত্রাংশ মেরামতের অভাবে এ ক্ষেত্রে পশ্চিমী সামরিক সাধনীর ব্যবহারে এই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমনকি বর্তমানেও ইরানের বিমানবাহিনী মার্কিন এফ-১৪ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে চলেছে।

সেই সময়ের লব্ধ অভিজ্ঞতা বর্তমানেও কাজে লাগানো হচ্ছে, যেখানে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একটি মূল ধারার শক্তি হওয়ার বদলে কোনও ভাবে ‘টিকে থাকা রাষ্ট্র হিসেবে তেহরানের ভাবমূর্তি দর্শানো হয়েছিল। এমনকি বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতার নতুন যুগে চিন এবং রাশিয়ার মতো অংশীদারদের সঙ্গে ইরানের বহুল চর্চিত সম্পর্কও পূর্বোল্লিখিত কৌশলগত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এবং এই ধারণাটি হল, মিত্র দেশ যে-ই হোক না কেন, সকল শক্তি বা সাধনী সেই মিত্র দেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায় না। এই ধারণার প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে বিশ্লেষক ইউন সান সম্প্রতি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, চিচাইবে যেন বিজয়ী প্রার্থী এই অঞ্চলে ইরান ও চিনের মধ্যে কৌশলগত সাযুজ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পশ্চিম-বিরোধী কর্মসূচির প্রতি যথেষ্ট অনুগত হবেন। কিন্তু তিনি এতটাও মৌলবাদী হবেন না, যা ইরানকে পারমাণবিক যুদ্ধের দোরগোড়ায় ঠেলে দেবে এবং ইরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধের ঝুঁকি তৈরি করবে।’

এ দিকে পেজেশকিয়ানের অধীনে ভারত-ইরান সম্পর্কে কোন বড় পরিবর্তন আসবে না এবং দুই দেশের সম্পর্কে একটি স্বাভাবিক গতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তেহরানের অন্যান্য নেতৃত্বের মতো – তা সে সংস্কারবাদী হোক বা কট্টরপন্থী - নয়াদিল্লির সঙ্গে পেজেশকিয়ানের সম্পর্কের প্রসার অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে পারস্পরিক নির্ভরতার দিকে আরও বেশি করে চালিত করবে।

এ দিকে পেজেশকিয়ানের অধীনে ভারত-ইরান সম্পর্কে কোন বড় পরিবর্তন আসবে না এবং দুই দেশের সম্পর্কে একটি স্বাভাবিক গতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপসংহার 

কট্টরপন্থীদের দ্বারা বেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও পেজেশকিয়ানকে ক্ষমতায় আনার নেপথ্যে থাকা ক্ষুদ্র শতাংশের বা জনসংখ্যার প্রত্যাশাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফলের এই অসামঞ্জস্যতা সত্ত্বেও সুপ্রিম লিডার এবং আইআরজিসি-এর জন্য নির্বাচনের সাফল্য এই অঞ্চলে এবং ইসলামি বিশ্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নিজস্ব অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পেজেশকিয়ান এই পরিস্থিতিকে অভ্যন্তরীণ ভাবে আরও কাজে লাগাতে পারেন কি না এবং মধ্যপন্থী’ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নীতিকে চালিত করতে পারেন না, তা-ই তাঁর প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। তত দিন ইরানের বৈদেশিক নীতির নকশা চেনা পথেই হাঁটবে বলে আশা করা যায়।

 


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.