Author : Sushant Sareen

Published on Jun 10, 2024 Updated 0 Hours ago

পাকিস্তান যদি আফগান চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে, তা হলে তাকে নিজের ভূখণ্ডের পাশাপাশি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে… এই দুই ক্ষেত্রেই যুদ্ধ চালাতে হবে।

আফগান ঘূর্ণি: পাকিস্তানের এ বার কৃতকর্মের ফল ভোগ করার সময় এসেছে

যদি যুদ্ধবিমান ড্রোন দিয়ে হামলা, গোপন লক্ষ্যবস্তুতে হত্যা অভিযান এবং আফগানিস্তানে জিহাদি ঘাঁটির মধ্যে ঢুকে শত্রুপক্ষকে নিকেশ করার কাজ এতটাই সহজ হত, তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হত না। ঠিক একই ভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ও নামেমাত্র ক্ষমতাসীন বেসামরিক সরকার যদি মনে করে যে তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে সন্দেহভাজন জঙ্গি শিবির / ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী হামলার সুবিশাল বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে, তা হলে সত্যিই এ বার সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় তাঁদের নীতি পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে। কারণ সন্ত্রাসবাদ ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। কিন্তু স্বল্পশিক্ষিত জেনারেলরা হয় অনেক ভাবনাচিন্তা করেন অথচ যথেষ্ট কাজ করে না, অথবা অনেক কাজ করলে তার নেপথ্যে একেবারেই তেমন ভাবনাচিন্তা করেন না। ফলে তাঁদের দ্বারা চালিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলটি সর্বদা চরম অকর্মণ্যতা এবং আফগানিস্তানের প্রতি আগ্রাসী নীতির মতো উভয়সঙ্কটের মাঝে পড়ে জর্জরিত। তা সত্ত্বেও এ কথা বলা জরুরি যে, পাকিস্তানের কাছে খুব বেশি বিকল্প নেই এবং বেছে নেওয়ার মতো যে বিকল্পগুলি আছে, তার সব ক’টিই খারাপ। তবে আরও খারাপ পরিস্থিতি হল এই  যে, আফগানিস্তানে আক্রমণাত্মক ভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, তার সীমানার মধ্যে যুদ্ধের মাধ্যমে একটি প্রতিরক্ষামূলক পন্থা অবলম্বন করা, পাকিস্তানি তালিবানের সঙ্গে শান্তি সমঝোতায় আসা বা এই তিনটি বিকল্পের সংমিশ্রণ… পাকিস্তান যে বিকল্পের অনুশীলন করুক না কেন, তার জালে সে নিজেই জড়িয়ে পড়েছে এবং সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হল, আফগানিস্তানের ঘূর্ণিতে আটকে পড়ার এই ভয়ঙ্কর সমস্যা পাকিস্তানের নিজের কর্মফল।

 

হামলা ও পালটা হামলা

১৮ মার্চ ভোর নাগাদ হাফিজ গুল বাহাদুরের নেতৃত্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ভয়ঙ্কর জিহাদি গোষ্ঠীগুলির একটির উপর আফগানিস্তানের পাকতিকা খোস্ত প্রদেশে পাকিস্তান বিমান হামলা চালায়। বিমান হামলাটি ছিল দুদিন আগে মীর আলিতে একটি পাকিস্তানি সেনাশিবিরের উপর চালানো একটি জটিল সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিশোধ, যে ঘটনায় দু’জন অফিসার-সহ সাতজন সৈনিক নিহত হন। হাফিজ গুল বাহাদুরের গোষ্ঠী ওই হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের হামলা এই প্রথম বার নয়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর ধারাবাহিক ভাবে ধ্বংসাত্মক আক্রমণের পর পাকিস্তানিরা খোস্ত কুনার প্রদেশে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) লক্ষ করে ড্রোন হামলা শুরু করে। পাকিস্তানিরা টিটিপি আফগানিস্তানে অবস্থিত অন্যান্য জিহাদি কমান্ডারকে লক্ষ্য করে গোপন অভিযান চালিয়েছিল বলেও মনে করা হয়। এ ছাড়াও সন্দেহজনক ড্রোন হামলা, রহস্যজনক আইইডি বিস্ফোরণ এবং পরিকল্পনামূলক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু  সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রতিহত করা কিংবা তালিবানকে টিটিপি এবং অন্যান্য সহযোগী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উস্কানি দেওয়া তো দূর অস্ত, এই ধরনের ঘটনা বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নিরলস ভাবে আক্রমণের ঘটনাকেই চালিত করেছে। এ ক্ষেত্রে এক মাত্র পরিবর্তনটি হল এই যে, টিটিপির পরিবর্তে এ বার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঘটা বড় হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-জিহাদ পাকিস্তানের মতো সামনের সারির সংগঠনগুলি। প্রায়শই পাকিস্তানিদের ক্ষোভ প্রদর্শনের পরে তালিবান পাকিস্তানকে আশ্বাস দিলেও টিটিপি-র বিরুদ্ধে কখনওই তেমন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

২০২২ সালে পাকিস্তান যখন প্রথম আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আফগানরা নিজেদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তানের তরফে ঘটা হামলার কথা স্বীকার করেনি। তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এমনকি সে সময়ে আফগানদের ধৈর্যের পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিলেন। তবে সর্বশেষ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক এই দায় স্বীকার করেসন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ সমাধান খুঁজে বের করা এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বিনাশকারী যে কোন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে আলোচনার পরিসর উন্মুক্ত রেখেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবশ্য আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। নেপথ্যে থেকে সন্ত্রাসবাদীদের চালনা করার জন্য তালিবানকে পুরোপুরি দোষারোপ করেছে পাকিস্তান এবং ভবিষ্যতেও এ হেন গতিশীল প্রতিশোধের উপর ভিত্তি করে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে। তালিবান ক্ষোভের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর পাশাপাশি উভয় পক্ষই মৌখিক ভাবে জ্বালাময় বিবৃতি প্রদান করেছে এবং আফগানিস্তান সামরিক ভাবে কামান ও গোলা দিয়ে পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকির উপর হামলা চালিয়েছে।

 

তালিবানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলি পাকিস্তানকে বিদ্রুপ করতে শুরু করেছে এবং হুমকি দিয়েছে যে, দেশটিকে তারা ঢাকার মতো পরাজয় স্বীকারে বাধ্য করবে।

 

নির্ভরতার শৃঙ্খল ভেঙে পড়ছে

স্পষ্টতই, তালিবান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক আস্থার ঘাটতি বিদ্যমান, পারস্পরিক দোষারোপ শত্রুতা স্পষ্ট এবং এই চাপানউতোর উভয় পক্ষের তরফে আক্রমণের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে। কোনধরনের প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম হলেও আফ-পাক অঞ্চলটি অদূর ভবিষ্যতেঅশান্ত থাকতে পারে। কৌশলগত কারণে টিটিপি-র কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালালেও তালিবান তাদের সম্পূর্ণ ভাবে পরিত্যাগ করবে না। কারণ টিটিপি পঞ্জাবি-অধ্যুষিত পাকিস্তানি রাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে তালিবানদের ক্ষমতা প্রদান করে। পঞ্জাবিদের পশতুনরা বিশ্বাসঘাতক অবিশ্বস্ত বলে মনে করে। এ ছাড়াও জাতিগত আদর্শগত সংযোগ তালিবান ও টিটিপি-কে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বেঁধেছে। আফগান ও পাকিস্তানি তালিবানরা প্রায় তিন দশক ধরে এই ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে। পাকিস্তানের পশতুন অঞ্চলে আফগানদের দাবি এবং ডুরান্ড লাইনকে দুই দেশের সীমানা হিসেবে মেনে নিতে তালিবান অস্বীকৃত হয়েছে।

রাজনৈতিক ভাবেও তালিবানদের জন্য এটি দর্শাতে হবে যে, তারা পাকিস্তানের প্রক্সি নয় এবং তাদের নিজস্ব সংগঠন রয়েছে। এ কথা শুধু মাত্র পাকিস্তান-বিদ্বেষী আফগান জনগণদের কাছেই প্রমাণ করতে হবে, তা নয়; বরং পাকিস্তানের প্রতি সহমর্মিতা পোষণা না করা ভারতের মতো সম্ভাব্য অংশীদার দেশের পাশাপাশি সেই সব দেশের কাছেও প্রমাণ করতে হবে, যারা মনে করে যে, পাকিস্তানের মাধ্যমেই তালিবানের মোকাবিলা করা সম্ভব। তালিবানের কৌশল স্পষ্ট: সম্পর্কের টানাপড়েন অব্যাহত থাকবে; তারা পাকিস্তানিদের প্রশমিত করার জন্য কৌশলগত ভাবে পশ্চাদপসরণ করলেও পাকিস্তানের দাবির সামনে নতি স্বীকার করবে না; আবার একই সঙ্গে তারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্পর্কও বজায় রেখে চলবে এবং ঠারেঠোরে পাকিস্তানের তরফে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকাররবে। তালিবানরা বরাবরই দাবি করে এসেছে সে, টিটিপি-র সব হামলা পাকিস্তানের অভ্যন্তর থেকে পরিচালিত হয় এবং এমনকি সর্বশেষ রাষ্ট্রপুঞ্জের মনিটরিং টিমের রিপোর্টও আংশিক ভাবে সেই কথা মেনে নিয়েছে। একই সময়ে আবার তালিবানরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে বাহ্যিক ভাবে মিষ্টতা বজায় রাখতে আগ্রহী। অর্থাৎ আফগানিস্তান পাকিস্তানের সঙ্গে সেটাই করতে চায়, ঠিক যেমনটা পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করেছিল। ইতিমধ্যে, তালিবান সক্রিয় ভাবে পাকিস্তানের নির্ভরতার শৃঙ্খল ভাঙারঅন্বেষণ করছে। পাকিস্তান থেকে তালিবানের বাণিজ্য স্থানান্তর করতে ইরানের চাবাহার বন্দরে ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি উজবেকিস্তানের সঙ্গে একটি রেল সংযোগ তৈরি করছে তালিবান, যার ফলে মধ্য এশিয়া এবং তার বাইরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহজে সংযুক্ত হবে আফগানিস্তান।

 

পাকিস্তানের দুর্দশা                       

পাকিস্তানিরা নিজেদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করেছে। আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তালিবানের বিজয় নিয়ে পাকিস্তানি উচ্ছ্বাস কমতে শুরু করে। তালিবানরা পাকিস্তানের পশ্চিম অংশ সুরক্ষিত করা তো দূর অস্ত, বরং পাকিস্তানিরা এখন তাদের পশ্চিম দিকে একটি দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনার সম্মুখীন। গত আড়াই বছর যাবৎ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাকিস্তানিরা আলোচনা চালানো, কূটনীতি প্রভাব থেকে শুরু করে ধর্মতাত্ত্বিক প্রভাব হয়ে কার্যকরী অভিযান… সব কিছুই চেষ্টা করেছে। এর সব কিছুই ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ বিমান হামলা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় যে, পাকিস্তান এখন তালিবানকে প্রতিহত করার জন্য আরও বেশি করে সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (যে পন্থা ভারতের বিশ্লেষকদের কাছে অতি পরিচিত)। নতুন পন্থাটি হল ভূখণ্ডে ও আকাশপথে তালিবানকে প্রতিহত করার জন্য কার্যকরী অভিযান। অন্তত পক্ষে বর্তমান পাকিস্তান নেতৃত্বের জন্য আগামী দিনে এমনটাই নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে চলেছে, যে সেনাবাহিনী টিটিপি-সঙ্গে যে কোনও রকম আলাপ-আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেপ্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকারের মতো তালিবানি অনুগতদেরকে সন্ত্রাসবাদের সূচনাকারী’ বলে তকমা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানপন্থীরা দ্বিতীয় বার ভাবেননি।

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার বিষয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রাথমিক ভাবে জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা যায় যে, পাকিস্তানিরা ইসলামি বিদ্রোহীদের উপর লাগাম টানতে এই নতুন আগ্রাসী নীতির পক্ষাবলম্বন করেছেন। রাজনৈতিক ভাবে এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য ইতিবাচক। কারণ এর ফলে অজনপ্রিয় পাকিস্তানি সেনা সাময়িক ভাবে হলেও দেশের জনসাধারণের কাছ থেকে সমর্থন কুড়োতে সমর্থ হয়েছে। নাগরিক নেতৃবৃন্দ সমস্যাটির বিষয়ে নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেছেন, যার লক্ষ্য ছিল শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা নয়, বরং চরমপন্থী পঞ্জাবি জনমতের পক্ষাবলম্বন করাও। পাকিস্তানিরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিটিপিকে একটি আন্তর্জাতিক হুমকি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের লক্ষ্য হল টিটিপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোগাড় করা এবং পাকিস্তানের কিছু আর্থিক সুবিধার বন্দোবস্ত করা।

 

অস্পষ্ট কৌশল

কিন্তু পাকিস্তানিরা কি তাদের নতুন নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আদৌ  বিচলিত? দেশের অনিশ্চিত আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল, প্রায় ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিনরা পরিস্থিতি থেকে নিজেদের ছিন্ন করে সেনা প্রত্যাহার করতে সমর্থ হলেও পাকিস্তান তেমনটা করতে সক্ষম হবে না। কারণ আফগানিস্তান তার নিকটতম প্রতিবেশী। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পাকিস্তানের কাছে তৃণমূল স্তরের তথ্য অনেক বেশি রয়েছে। যে সকল তালিবানের পরিবার পাকিস্তানে বসবাস করে, তাদের ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান, তারা তালিবানের তুলনায় সামরিক ক্ষমতায়ও অনেকটা এগিয়ে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মাঝে এটি এমন এক দীর্ঘ ও অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধ হতে চলেছে, যা পাকিস্তানের সকল শক্তি নিংড়ে নেবে। এর পাশাপাশি পূর্ব সীমান্ত বরাবর – যেখানে দেশটি ভারতের সঙ্গে সহিংস সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ – পাকিস্তানের ব্যস্ত থাকা শুধু মাত্র এই সমস্যা ও ঝুঁকির জটিলতা বাড়িয়ে তুলবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে প্রচুর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পদ এবং সামরিক সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। তারা একাধিক সন্ত্রাসবাদী ব্যক্তিত্বকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। এবং এখনও ২০ বছরব্যাপী অবিরাম লড়াইয়ের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসম্মানজনক সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। মার্কিন সম্পদের তুলনায় পাকিস্তানিদের কাছে যৎসামান্যই সম্পদ রয়েছে এবং তাদের সামর্থ্য সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়ার তুলনায় প্রায় নগণ্য। তা সত্ত্বেও যদি পাকিস্তান মনে করে যে, তারা মার্কিন কৌশল ব্যবহার করে তালিবানদের তাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য করবে, তা হলে পাকিস্তান হয়তো মূর্খের স্বর্গেই বাস করছে। রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হাইকমান্ড যদি আদৌ বিষয়গুলি তলিয়ে দেখতেন, তা হলে তাঁরা হয়তো আফগানিস্তানের ভিতরে সন্দেহভাজন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ঘাঁটিগুলির উপর বিমান হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতেন। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীতিগত ভাবে বুদ্ধিমান অথচ কৌশলগত ভাবে বোকা হওয়ার এক অপ্রতিরোধ্য নজির রয়েছে। পাকিস্তান নিজের জালে বরাবর নিজেই জড়িয়ে পড়ে।

 

এই পরিস্থিতি থেকে পাকিস্তানের বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। কারণ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশটি ব্যাপক ভাবে সামরিক শক্তি ব্যবহার করার নীতি মেনে এসেছে। এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার ইসলামপন্থীদের তরফে ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে।

 

তালিবানরা যত দিন না স্বমহিমায় নিজেদের রূপ ধরার চেষ্টা বন্ধ করবে, তত দিন পর্যন্ত পাকিস্তানকে দুটি সংলগ্ন পরিসরে লড়াই করতে হবে: তার নিজের ভূখণ্ডের ভিতরে এবং একই সঙ্গে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে। এই ধরনের লড়াইয়ে সাধারণত শুধু মাত্র দুটি সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে: এক হল অস্বাভাবিক ক্ষতির বিনিময়ে বিজয় অথবা পঙ্গু করে দেওয়ার মতো পরাজয়। এর মধ্যে কোনটার মূল্য চোকানোর অবস্থায় পাকিস্তান নেই।

 


সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.