Author : Swati Prabhu

Published on Jul 01, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া এসআইডিএস-এর সঙ্গে সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে এসআইডিএস-ও উভয় দেশের সঙ্গে একটি উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব সশক্ত করার মাধ্যমে লাভবান হবে।

এসআইডিএস সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: একটি ভারত-অস্ট্রেলিয়া-এসআইডিএস ত্রিপাক্ষিক জোটের সম্ভাবনা?

এসআইডিএস সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্থে অনুষ্ঠিত ভারত মহাসাগর সম্মেলনের পরে নয়াদিল্লিতে ডেফস্যাট ২০২৪ আয়োজিত হয় এবং এই দুই সমাবেশের মাধ্যমে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার জন্য একাধিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করছে। উদাহরণস্বরূপ, দুই দেশ সম্প্রতি মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্পে তাদের সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে। ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনীতির প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকায় এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতা বহন করে। যাই হোক, এটি ভৌগোলিক বিস্তৃতির ইতিহাসের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে ঘটছে যেখানে স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটস বা উন্নয়নশীল ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলি (এসআইডিএস) ধীরে ধীরে তাদের চ্যালেঞ্জ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সরব হয়ে উঠছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের অস্তিত্বগত হুমকি এসআইডিএস-এর জন্য একটি চরম বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমি হ্রাস, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, গণতন্ত্রের ঘাটতি, ঋণের দুরবস্থা এবং প্রশাসনের চ্যালেঞ্জের মতো সমস্যাগুলির জন্য সংবেদনশীল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির মধ্যে এসআইডিএস এজেন্ডা ২০৩০-এর নিরিখে একটি সম্ভাব্য নির্ণায়ক বিন্দু হয়ে উঠেছে। টুভালু, ফিজি এবং ভানুয়াতুর মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জেই ঋণ জিডিপি-র অনুপাত ৭০ শতাংশের বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কান্ট্রি রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিমারির পরে প্যাসিফিক দেশগুলির গড় ঋণ জিডিপি-র অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৩২.৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা ২০২১ সালে ৪২.২ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়াও দূরত্ব, ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় শতাংশ নিয়ে গঠিত ক্ষুদ্র জনসংখ্যা মৌলিক বৈশিষ্ট্য দ্বীপগুলির বিদ্যমান উন্নয়নের সমস্যা বৃদ্ধি করেছে।

 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমি হ্রাস, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, গণতন্ত্রের ঘাটতি, ঋণের দুরবস্থা এবং প্রশাসনের চ্যালেঞ্জের মতো সমস্যাগুলির জন্য সংবেদনশীল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির মধ্যে এসআইডিএস এজেন্ডা ২০৩০-এর নিরিখে একটি সম্ভাব্য নির্ণায়ক বিন্দু হয়ে উঠেছে।

 

অর্থনৈতিক মন্দা, বিশ্ব জুড়ে বিদ্যমান অস্থিরতা, ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলগুলির দুর্বল হয়ে পড়া স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) জন্য অর্থায়নকে নিঃসন্দেহে হুমকির মুখে ফেলেছেএ ক্ষেত্রে এসআইডিএস অর্থায়ন বিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। মূলধন বহিঃপ্রবাহ, বেসরকারি অর্থপ্রেরণ এবং জন অর্থায়নের নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে অতিরিক্ত রাজস্ব ব্যবস্থার সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা ঝড় তুলছে এবং স্থিতিশীলতার জন্য অর্থায়ন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু প্রশমন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একটি সুস্পষ্ট পক্ষপাত লক্ষ করা যাচ্ছেঅ্যাডাপ্টেশন রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গণ বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক অভিযোজন অর্থ প্রবাহ ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ কমে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ক্রমবর্ধমান অভিযোজন আর্থিক চাহিদা অর্থের অনিশ্চিত সরবরাহের ফলে বর্তমান অভিযোজন অর্থের ব্যবধান এখন প্রতি বছর ১৯৪-৩৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমান করা হয়েছে।

 

এসআইডিএস এবং ভারত-অস্ট্রেলিয়া ত্রিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা

বর্তমানে উন্নয়ন অংশীদারিত্ব বা সহযোগিতা যে কোন দেশের বিদেশনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান থাকার কারণে অংশীদারিত্বের ধারণাটি সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কিছু উন্নয়নশীল অর্থনীতি অর্থাৎ ভারত, চি, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল দক্ষতা প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা-নির্মাণ এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থান প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তাই উন্নয়ন অংশীদারিত্ব আর পশ্চিমের একচেটিয়া অধিকার নয়। এ ছাড়া ‘ত্রাণ’ থেকে অংশীদারিত্ববা সহযোগিতা’-য় একটি রূপান্তর ঘটেছে যা সম্পর্কের প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে এবং যা একটি সমান ভিত্তির উপর নির্মিত।

 

ফোরাম ফর ভারত-প্যাসিফিক আইল্যান্ডস কো-অপারেশনের (এফআইপিআইসি) জন্য ভারতের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলি দ্বীপদেশগুলির আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়াও, ভারতের নিজস্ব উন্নয়নের আখ্যানটি অনন্য।

 

ভূ-কৌশলগত ভূ-অর্থনীতির দিক থেকে ইন্দো-প্যাসিফিকের এই ছোট দ্বীপগুলি ভারত অস্ট্রেলিয়া উভয়ের জন্যই বেশ প্রাসঙ্গিক। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ক্যানবেরা এই অঞ্চলে নিবিড় ভাবে কাজ করলেও অস্ট্রেলিয়াকে দুর্যোগের স্থিতিস্থাপকতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এগুলি দ্বীপ দেশটির জন্য লাভজনক হবে। ফোরাম ফর ভারত-প্যাসিফিক আইল্যান্ডস কো-অপারেশনের (এফআইপিআইসি) জন্য ভারতের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলি দ্বীপদেশগুলির আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়াও, ভারতের নিজস্ব উন্নয়নের আখ্যানটি অনন্য। এর উন্নয়নশীল অর্থনীতির মর্যাদা বিবেচনা করে ভারত গ্লোবাল সাউথের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ভাগ করে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। এই দিক থেকে দেখলে, এসআইডিএস উন্নয়নগত ভাবে এবং কৌশলগত ভাবে লাভবান হবে। এই দ্বীপদেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তন শক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থিতিস্থাপকতা তৈরি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। সর্বোপরি দেখা গিয়েছে যে, এই রাষ্ট্রগুলি জীবাশ্ম জ্বালানির উপরও যথেষ্ট নির্ভরশীল; শক্তির সংস্থান বিকাশ এবং প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর কাছে এই পরিষেবাগুলি প্রসারিত করার ক্ষেত্রে বিপুল ব্যয় জড়িত রয়েছে; জ্বালানির উৎস প্রবণতা নিম্ন মান এবং সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে সমাধানের জন্য দক্ষ মানুষদের ভিত্তিও স্বল্প। এ ছাড়াও, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলে সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য চিনে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ অস্ট্রেলিয়া এবং এর কোয়াড অংশীদারদের উপর তাদের সম্পৃক্ততা গভীর করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ফিজি সফরের পরে সরাসরি সিডনিতে ভ্রমণ করার পর বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রভাব, আগ্রহ ও উপস্থিতি বাড়ছে এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সাম্প্রতিক কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করার পর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

অতীতে প্রথাগত দাতাদের সঙ্গে যুক্ত হতে ভারতের অনীহার নেপথ্যে ছিল একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নির্দেশিকা এবং প্রণোদনার অভাব

 

যাই হোক, উত্তর থেকে আসা অস্ট্রেলিয়ার মডেলের সঙ্গে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্বকারী ভারতের বিভিন্ন উন্নয়ন মডেলের সমন্বিতকরণ কিছুটা জটিল হতে পারে। তবুও, চিনের মতো দক্ষিণের অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদার দেশের তুলনায় নয়াদিল্লির অংশীদারিত্বের মডেলটি পশ্চিমী বিশ্বে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ত্রিপাক্ষিক জোট ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। একদা বিকল্প হিসেবে তেমন জনপ্রিয় না হলেও বিষয়টি এখন ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেঅতীতে প্রথাগত দাতাদের সঙ্গে যুক্ত হতে ভারতের অনীহার নেপথ্যে ছিল একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নির্দেশিকা এবং প্রণোদনার অভাব। স্থিতিশীল অর্থায়নের ব্যবধান পূরণে বিদ্যমান ফাঁকগুলিও উন্নয়ন প্রদানকারীদের মধ্যে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কী ভাবে বেসরকারি শক্তিদের একত্রিত করে উন্নয়ন অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, সামাজিক প্রভাব বিনিয়োগের উপকরণগুলিকে সশক্ত করা যায়, নীতি বাস্তুতন্ত্রের প্রকৃত সক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব… তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই অর্থে, ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুশীল সমাজ, উন্নয়নমূলক এনজিও, জনহিতৈষী এবং বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে সংস্থান এবং শক্তিদের সুসংহত করার মাধ্যমে, বিশেষ করে এসআইডিএস-এর জন্য অর্থায়নের উদ্যোগগুলিকে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এ ভাবে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতাও সকল অংশীদারের জন্য বর্ধিত প্রসার এবং বিতরণমূলক সুবিধা সুনিশ্চিত করবে। এটি এমন একটি বিষয় যা অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত উভয়কেই তাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে আকার দিতে সাহায্য করবে।

 


স্বাতী প্রভু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.