Author : Chandra Bhushan

Published on Dec 08, 2021 Updated 0 Hours ago

ভারতকে অন্তর্ভুক্তিকর অতিক্ৰমণ নিশ্চিত করতে হলে এমন নীতিগত হস্তক্ষেপ করতে হবে যার ফলে শক্তি অতিক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য বা জনগােষ্ঠীগুলির স্বার্থ রক্ষা করা যায়।

ন্যায্য অতিক্রমণের মাধ্যমে নেট-জিরােয় পৌঁছনাে প্রসঙ্গে

এই নিবন্ধ একটি সিরিজের অংশ যার নাম: নেট-জিরােয় অতিক্রমণের পথ ও নীতি


১. ভূমিকা

মানবজাতি যদি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অপূরণীয় বিপর্যয়কর ক্ষতি এড়াতে চায়, তা হলে প্রশমনের লক্ষ্যে সক্রিয়তার জন্য হাতে সময় এখন সীমিত। এই বছরের দুটো রিপাের্ট ‘চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। প্রথমটা ‘নেট জিরাে বাই ২০৫০: আ রােডম্যাপ ফর দ্য গ্লোবাল এনার্জি সেক্টর’, যা তৈরি করেছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। এতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আগামী তিন দশক ধরে সব দেশকে কতটা মাত্রায় এবং কী ধরনের জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া আছে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর ক্লাইমেট চেঞ্জ ২০২১: দ্য ফিজিকাল সায়েন্স বেসিস, ওয়ার্কিং গ্রুপ ওয়ান, কনট্রিবিউশন টু দ্য সিক্স্থ অ্যাসেসমেন্ট রিপাের্ট’। এতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মানুষ ও অর্থনীতির ক্ষতি করবে এমন চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও তীব্রতার ক্রমবর্ধমান হার সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে

এই নিবন্ধটি লেখার সময় পর্যন্ত ভারত যদিও নেট-জিরাে নিঃসরণে পৌঁছনাের লক্ষ্য ঘােষণা করেনি, তা হলেও ভারতের নেট জিরােয় পৌঁছনাের পথ নিয়ে সাম্প্রতিক দুটি মডেল সমীক্ষা আগামী তিন থেকে চার দশকে জীবাশ্ম জ্বালানি কমানাের সম্ভাব্য দিশার উপর আলােকপাত করেছে।

ভারত শিল্পের প্রসার ও শক্তির প্রয়ােজন মেটানাের জন্য ব্যাপক ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল, আবার একই সঙ্গে জলবায়ুগত বিপদের সামনেও অরক্ষিত। কাজেই ভারতের জন্য সব দিক থেকেই আগামী তিনটি দশক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন ভারতের প্রাথমিক শক্তি সরবরাহের ৭০ শতাংশ আসে কয়লা ও তেল, এই দুই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এর মধ্যে কয়লা হল ৪৪ শতাংশ, আর তেল ২৫ শতাংশ (আইইএ, ২০২০)। এই নিবন্ধটি লেখার সময় পর্যন্ত ভারত যদিও নেট-জিরাে নিঃসরণে পৌছনাের লক্ষ্য ঘােষণা করেনি, তা হলেও ভারতের নেট জিরােয় পৌঁছনাের পথ নিয়ে সাম্প্রতিক দুটি মডেল সমীক্ষা আগামী তিন থেকে চার দশকে জীবাশ্ম জ্বালানি কমানাের সম্ভাব্য দিশার উপর আলােকপাত করেছে।

আইইএ-র এক সমীক্ষা বলছে ভারতের কয়লার চাহিদা ২০৪০-এর মধ্যে অর্ধেক করতে হবে, এবং ২০৫০-এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ কমাতে হবে। আর একটি সমীক্ষা, যা করেছে এনার্জি রিসাের্সেস ইনস্টিটিউট (টিইআরআই) ও শেল, তাতে কয়লা ও তেল দুটোর চাহিদাই ২০৫০-এর মধ্যে ৬০ শতাংশ কমিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে

সারণি ১: মধ্য-২০৬০ পর্যন্ত নেট-জিরাে পথক্ৰম

জীবাশ্ম জ্বালানি ক্ষেত্রে স্থিতিশীল উন্নয়নের দৃশ্যপট
২০১৯ ২০৩০ ২০৪০ ২০৫০*
কয়লার চাহিদা (এমটিসিই) ৫৯০ ৪৫৪ ২৯৮ ১০০
তেলের চাহিদা (এমবি/ডি) ৫.০ ৬.২ ৫.৮ ৩.৪৮
প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা (বিসিএম) ৬৩ ১৪৪ ২১০ ১৫০

সূত্র:আইইএ, ২০২১

নােট: আইইএ শুধু ২০৪০ অবধি তথ্য দেয়। ২০৫০-এর জন্য সেই অনুযায়ী হিসাব করার সময়। একথাও ধরা হয়েছে যে কয়লা শূন্যয় পৌছবে ২০৫৫ সালে, তেল ২০৬৫ সালে, আর গ্যাসের ব্যবহার ২০৬৫ সালেও ২০২০-র মতােই থাকবে। এই ধরনের ব্যবহারের মাত্রা বজায় থাকলে ভারত ২০৬৫ সালে নেট জিরােয় পৌঁছবে।

সারণি ২:২০৫১ পর্যন্ত নেট-জিরাে পথক্ৰম

প্রাথমিক শক্তি প্রয়ােজন (এমটিওই) ২০২১ ২০৫১
কয়লা ৫০৫ ২১৬
তেল ২২২ ৮৯
গ্যাস ৫৩ ১৪৯
পরমাণু ১৯ ৪৫
জল ২১ ৩৩
সৌর ৯৩ ৮৭৬
বায়ু ২৭ ৫৪৮
জৈব/বর্জ্য/অন্যান্য ৯২ ২০৪

সূত্র: টিইআরআই ও শেল, ২০২১

কয়লা ও তেলের উৎপাদন ও ব্যবহার ধীরে ধীরে কমানাে হলে যে সব ক্ষেত্র এগুলাের উপর। নির্ভরশীল, তাদের উপর অত্যন্ত বেশি প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া খুব দ্রুত যদি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ থেকে পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তিতে সরে যাওয়া হয়, যেমন অতিক্ৰমণ ভারতে এখন হচ্ছে, তা হলে। তার জন্য প্রয়ােজন নিম্নধারার ক্ষেত্রগুলির, বিশেষ করে ইস্পাত, সিমেন্ট, গাড়ি ও সার শিল্পে নতুন। নতুন উদ্ভাবন। তবে জলবায়ু সঙ্কট মােকাবিলায় দ্রুত শক্তি অতিক্রমণ ও শিল্প ক্ষেত্রে পরিবর্তন কোনও বিচ্ছিন্ন প্রযুক্তিগত অনুশীলন হতে পারে না। ভারতীয় অর্থনীতির যা প্রকৃতি, যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের শ্রমিক মােট শ্রমশক্তির ৯০ শতাংশ, সেখানে শক্তির বা অর্থনৈতিক নতুন উদ্ভাবনের প্রয়াস হতে হবে সামাজিক ভাবে দায়িত্বশীল অনুশীলন। এই প্রসঙ্গে মাথায় রাখতে হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমশক্তি কী ভাবে বণ্টিত, সেই ক্ষেত্রগুলাের উপর স্থানীয় মানুষের জীবিকা কতটা নির্ভরশীল, এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা ও তার স্থিতিস্থাপকতার ক্ষমতা। কাজেই ন্যায্য অতিক্ৰমণ’-এর প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।[১]

২. ন্যায্য অতিক্রমণের জন্য ক্ষেত্রভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতে প্রাথমিক শক্তির বিভিন্ন উপাদানের প্রধান হল কয়লা।[১.১] তবে ন্যায্য অতিক্রমণে দৃষ্টি শুধু কয়লার উপর নিবদ্ধ করলে চলবে না। রূপান্তরকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে আগামী তিন-চার দশকের মধ্যে নেট-জিরাে নিঃসরণের লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে ন্যায্য অতিক্রমণের কথা ভাবতে হবে সেই সব ক্ষেত্রের জন্যও, যেখানে প্রতিযােগী বিকল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে নিঃসরণ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমানাের সম্ভাবনা আছে।

যেমন গ্রিনহাউজ গ্যাস (জিএইচজি) নিঃসরণ হ্রাসের সম্ভাবনা ও বিকল্প প্রযুক্তির লভ্যতা থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ন্যায্য অতিক্রমণের জন্য কতগুলাে ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেই। ক্ষেত্রগুলাের মধ্যে আছে কয়লাখনি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সড়ক পরিবহণ, অন্যান্য শিল্প ও কৃষি (ইউরিয়ার ব্যবহার)। এই ক্ষেত্রগুলি সম্মিলিত ভাবে ৬৪ শতাংশ জিএইচজি নিঃসরণ ঘটায়, এবং এই ক্ষেত্রগুলােতে অতিক্রমণের জন্য প্রয়ােজনীয় প্রযুক্তির ৯০ শতাংশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারযােগ্য হয়ে উঠবে (চিত্র ১ দেখুন)। এই কারণেই ন্যায্য অতিক্রমণের পরিকল্পনা করার জন্য আগামী দশ বছর অতি গুরুত্বপূর্ণ। ইস্পাত বা সিমেন্টের মতাে অন্য কয়লানির্ভর ক্ষেত্রগুলাে ন্যায্য অতিক্রমণের উপযােগী হয়ে উঠবে ২০৩০-এর দশকে। বাকি শিল্প ও কৃষি সম্ভবত ধীরে ধীরে অতিক্রমণের পথে যাবে।[২]

চিত্র ১: নিঃসরণ বনাম প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি

সূত্র: সি ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া,” ২০২১

৩. সম্ভাব্য প্রভাব ও অগ্রাধিকার

ভারতের স্বচ্ছ শক্তিতে অতিক্রমণের ব্যাপক প্রভাব পড়বে সারা দেশের অর্থনীতি ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী জনগােষ্ঠীগুলির উপরে। স্বচ্ছ শক্তিতে অতিক্রমণের চেহারা কেমন হবে, এবং তার মধ্যে কী থাকবে তা বােঝার জন্য তিনটে মাপকাঠি আছে: স্থানিক প্রভাব, শ্রমশক্তিগত প্রভাব ও রাজস্বের উপর প্রভাব।

ক। স্থানিক প্রভাব: দেশের ৭১৮টি জেলার ১২০টিতে অধিক অনুপাতে আছে জীবাশ্ম জ্বালানি বা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল শিল্প: কয়লা খনি, তেল ও গ্যাস উৎপাদন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল শােধনাগার, ইস্পাত, সিমেন্ট, সার (ইউরিয়া), ও গাড়ি। এই জেলাগুলােতে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ থাকেন, যা কিনা দেশের মােট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ। আগামী দুই-তিন দশকে শক্তি অতিক্রমণ নানা মাত্রায় দেশের এই ১২০টি জেলাকে প্রভাবিত করবে,[৩] কিন্তু আগামী এক দশকে ন্যায্য অতিক্রমণের পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে এমন ৬০টি জেলাকে যারা কয়লা ও লিগনাইটের ৯৫ শতাংশ, তাপবিদ্যুতের ৬০ শতাংশ এবং গাড়ি বা গাড়ির যন্ত্রাংশের ৯০ শতাংশ উৎপাদন করে। এই জেলাগুলাের এক-তৃতীয়াংশ আছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের কয়লা বলয়ে (দেখুন চিত্র ২)।

চিত্র ২: বর্তমান দশকে ন্যায্য অতিক্রমণের পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারের অঞ্চল

সূত্র: গ. ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া,” ২০২১

নিশ্চিত ভাবেই যে রাজ্য ও জেলাগুলাে স্বচ্ছ শক্তিতে অতিক্রমণের পথে সবচেয়ে কঠিন সমস্যার মুখােমুখি হবে, সেগুলিই জলবায়ু পরিবর্তনে সব থেকে অরক্ষিত (দেখুন চিত্র ৩)। এর কারণ এই জেলাগুলিতে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের আধিক্য, যা আরও জটিল হচ্ছে স্বাস্থ্যের দেখভাল, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মানের করুণ দশার কারণে।[৪]

চিত্র ৩: জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে সব থেকে অরক্ষিত রাজ্যগুলাে

সূত্র: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, ভারত সরকার, ২০২০

৩.২ শ্রমশক্তিগত প্রভাব: আগামী দশকগুলােতে স্বচ্ছ শক্তিতে অতিক্রমণের (দেখুন সারণি ৩) প্রভাব পড়বে অন্তত ২ কোটি ১৫ লক্ষ এমন মানুষের উপর যাঁরা ভারতে জীবাশ্ম জ্বালানি ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর ক্ষেত্রে কাজ করেন। এই প্রভাব আরও মারাত্মক হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের কর্মীদের উপর, আর তাঁদের সংখ্যা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের কর্মীদের চারগুণ। অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী সবচেয়ে বেশি কয়লা খনি, ইস্পাত, সিমেন্ট ও খুচরাে জ্বালানিতে, আর এঁদের অধিকাংশই হলেন কম দক্ষ, কম শিক্ষিত, ও কম আয়সম্পন্ন।

শক্তি অতিক্রমণের তিন রকম প্রাথমিক প্রভাব শ্রমিকদের উপর পড়বে, আর সেগুলাের কথা অতিক্রমণের পরিকল্পনার সময় মাথায় রাখতে হবে: উৎপাদন কমতে থাকা ও শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কর্মহানি; উৎপাদন প্রক্রিয়ার বা কেন্দ্রগুলির কাজের লক্ষ্য বদলে যাওয়ার ফলে এখনকার কর্মীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও দক্ষতায়ন; এবং নতুন কর্মীদের কম-কার্বন শিল্পে কাজ করার জন্য দক্ষ করে তােলা।

সারণি ৩: আনুমানিক কর্মিসংখ্যা (১০ লক্ষে)

ক্ষেত্র অনানুষ্ঠানিক কর্মী আনুষ্ঠানিক কর্মী মােট কর্মী
কয়লা খনি  ১.৮ ০.৮ ২.৬
কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ ০.০৫ ০.১৩ ০.১৮
লৌহ-ইস্পাত ২.৬ ০.৩ ২.৯
সিমেন্ট ১.২ ০.২ ১.৪
শােধনাগার বাদে তেল ও গ্যাস নেই ০.১২ ০.১২
শােধনাগার ০.০৮ ০.০৪ ০.১২
খুচরাে জ্বালানি ০.৯৬ ০.১৪ ১.১০
এলপিজি বণ্টন ০.০১ ০.০৯ ০.১০
সার ০.২ ০.০২ ০.২২
অটোমোবাইল নেই নেই ১২.৮
তথ্য ৬.৯ ১.৮ ২১.৫

সূত্র: গ. ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া,” ২০২১

৩.৩ রাজস্ব প্রভাব: জীবাশ্ম জ্বালানি অতিক্রমণের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলাের রাজস্বের উপর। কয়লা, তেল ও গ্যাস থেকে সম্মিলিত ভাবে কেন্দ্রের রাজস্বের ১৮.৮ শতাংশ, এবং রাজ্যগুলাের ৮.৩ শতাংশ আসে। এর মধ্যে আনুমানিক ৯১ শতাংশ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আসে, আর ৯ শতাংশ মাত্র কয়লা থেকে। কাজেই ন্যায্য অতিক্রমণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাজস্বের ক্ষেত্রে কয়লার তুলনায় তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের অতিক্রমণের প্রভাব পড়বে অনেক বেশি। অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী সবচেয়ে বেশি কয়লা খনি, ইস্পাত, সিমেন্ট ও খুচরাে জ্বালানিতে, আর এঁদের অধিকাংশই হলেন কম দক্ষ, কম শিক্ষিত, ও কম আয়সম্পন্ন।

কয়লা খনি থেকে রাজস্বহানি অবশ্য রাজ্যগুলাের বেশি ক্ষতি করবে, বিশেষ করে সেই রাজ্যগুলাের যেখানে কয়লা খনি বেশি আছে। রাজ্যগুলাের জন্য কয়লা থেকে রাজস্বের বড় উৎস হল রয়্যালটি ও ডিস্ট্রিক্ট মিনারেল ফাউন্ডেশন (ডিএমএফ)-এর থেকে পাওয়া টাকা। সর্বাধিক কয়লা উৎপাদক রাজ্যগুলাের বেশির ভাগ, যেমন ঝাড়খণ্ড বা ছত্তিসগড়, কয়লা খনি থেকে জেলাভিত্তিক যে রাজস্ব (পিএসইউ-গুলাে থেকে, যারা বড় অপারেটর) পায় তা রাজ্যের মােট রাজস্বের ৫ থেকে ৬ শতাংশ।[৫] তা ছাড়া অনেক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পেট্রোল ও ডিজেলের বিক্রয় কর বাবদ ভাল রাজস্ব পায়। সম্মিলিত ভাবে পেট্রোল ও ডিজেলের বিক্রয় কর বাবদ রাজস্ব ওডিশা ও মধ্যপ্রদেশের মতাে কোনও কোনও রাজ্যে কয়লাখনি বাবদ পাওয়া রাজস্বের থেকে অনেক বেশি (দেখুন সারণি ৪)। ফলে যদি চালিকাশক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ এসে যায়, তা হলে গাড়ির ক্ষেত্রে শক্তি অতিক্রমণের ফলে রাজ্যগুলাের যথেষ্ট রাজস্ব ক্ষতি হবে। এর মধ্যে এমন অতিক্রমণ অনেকটাই ঘটেছে দ্বিচক্রযানের ক্ষেত্রে, যা পেট্রোলের ৬০ শতাংশের উপভােক্তা।

সারণি ৪: পেট্রোল ও ডিজেলের থেকে বিক্রয় কর ও কয়লা খনি থেকে প্রত্যক্ষ রাজস্ব

রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত পিএসইউ-এর কর ও রাজস্ (১০০ কোটি টাকায়) অঞ্চল সিপিএসই থেকে কয়লাখনি থেকে বিক্রয়কর/ ভ্যাট (১০০ কোটি টাকায়)
  পেট্রোল ডিজেল  
ছত্তিসগড় ১২.৬৭ ২৪.৮৪ ৩২.২১
ঝাড়খণ্ড ৮.৯৭ ২০.১৯ ৩৯.৯২
মধ্যপ্রদেশ ২৮.৭১ ৩৮.৭৫ ৩৪.১০
ওডিশা ১৫.৭৯ ৩৮.৩৯ ২৯.১০

সূত্র: গ. ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া,” ২০২১

৪. ন্যায্য অতিক্রমণের ফলে কী ঘটবে?

ভারতে ‘ন্যায্য অতিক্ৰমণ’-এর জন্য প্রয়ােজন উন্নয়নমূলক হস্তক্ষেপের, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল রাজ্য, জেলা, কর্মী ও স্থানীয় জনসমুদায়ের উপর শক্তি ও শিল্পে অতিক্রমণের নেতিবাচক প্রভাব ন্যূনতম করা যায়। এর জন্য প্রয়ােজন নিম্নলিখিত ৫ টি বিষয়ের (5Rs) উপর কাজ করা:

১. অর্থনীতি ও শিল্পের পুনর্বিন্যাস;

২. জমি ও পরিকাঠামাে ব্যবহারের লক্ষ্য বদলে ফেলা;

৩. এখনকার কর্মীদের নতুন করে ও নতুন কর্মীদের শুরু থেকে দক্ষ করে তােলা;

৪. ন্যায্য অতিক্রমণে রাজস্ব প্রতিস্থাপন ও বিনিয়ােগ; এবং,

৫. দায়িত্বশীল সামাজিক ও পরিবেশগত ব্যবস্থাগ্রহণ।

৪.১. অর্থনীতি ও শিল্পের পুনর্বিন্যাস: জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল জেলাগুলির অর্থনীতি ও শিল্পের পুনর্বিন্যাস খুবই প্রয়ােজন। এখন ভারতের অধিকাংশ কয়লা জেলাই একক-শিল্পভিত্তিক জেলা; ফলে সেখানে অন্যান্য ক্ষেত্রের কাজের সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। যেমন ছত্তিসগড়ের কোরবা জেলায়, যেখান থেকে ভারতের কয়লা উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসে, সেখানে জেলাটির মােট আভ্যন্তর উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশই আসে খনি থেকে। এমনকি ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলায়, যেখানকার ৫০ শতাংশ খনিকেই ধরা হয় অ-লাভজনক, সেখানেও জেলার মােট আভ্যন্তর উৎপাদনের ৪০ শতাংশের বেশি আসে কয়লা ও কয়লা-নির্ভর শিল্প থেকে।

একটা সুপরিকল্পিত শিল্প পুনর্গঠন পরিকল্পনা এবং তার সহায়ক আর্থিক ব্যবস্থা অস্থিরতাকে ন্যূনতম পর্যায়ে বেঁধে রেখে অতিক্রমণের পথ করে দিতে পারে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির যেমন যথােপযুক্ত শিল্প নীতি তৈরি করা প্রয়ােজন, তেমনই প্রয়ােজন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে কথাবার্তার ভিত্তিতে জেলার উন্নয়নের পরিকল্পনা। তা ছাড়া অর্থনীতি ও শিল্পের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে স্থানীয় সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারও প্রয়ােজন। অনেক জীবাশ্ম জ্বালানি জেলায় স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার এবং স্থায়ী হবে এমন শিল্প তৈরি করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে; তবে তার জন্য স্থানীয় কৃষি ও বনজ সম্পদ, জলজ সম্পদ, ডেয়ারি, ও পর্যটনের সাহায্য নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের অগ্রণী কয়লা উত্তোলনকারী জেলাগুলিতে গড়ে ৩১ শতাংশ বনভূমি আছে, যা ভারতের গড়ের ১০ শতাংশ বেশি।

৪.২. জমি ও পরিকাঠামাে ব্যবহারের লক্ষ্য বদলে ফেলা: নতুন শিল্প গড়ার একটা বড় সমস্যা হল জমির প্রাপ্যতা ও তা অধিগ্রহণ। এর মােকাবিলা করা যায় এখনকার জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পগুলির জমি ও পরিকাঠামাের ব্যবহারিক লক্ষ্য বদলে দিয়ে। কয়লা খনি ও কয়লার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বড় শিল্পগুলির। কাছে আছে হিসাবমতাে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর জমি। এর মধ্যে আছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ, লৌহইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্প। শুধু কয়লা খনি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির হাতেই আছে ৩ লক্ষ হেক্টর জমি।[৬]

জমি পুনর্গঠনের ফলে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুযােগ তৈরি হয়। স্বল্পমেয়াদে জমি পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য প্রয়ােজন অনেক দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী। এর ফলে প্রত্যক্ষ কাজের সুযােগ তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে উপযুক্ত বিনিয়ােগের দ্বারা সমর্থিত সুপরিকল্পিত পরিকাঠামাে প্রকল্পগুলি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য বিরাট ভাবে লাভজনক হতে পারে।

৪.৩. এখনকার কর্মীদের নতুন করে ও নতুন কর্মীদের শুরু থেকে দক্ষ করে তােলা: জীবাশ্ম জ্বালানি অতিক্রমণের সময় কাজ হারানাের ক্ষতি পূরণ করতে, এবং শিল্পের পুনর্গঠন ও উৎপাদন কেন্দ্রগুলির পরিবর্তিত লক্ষ্যের ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য, একটা প্রগতিশীল দক্ষতায়ন পরিকল্পনা প্রয়ােজন। কয়লা ও কয়লাভিত্তিক শক্তি, গাড়ির অনুসারী শিল্প ও শােধনাগারের মতাে ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি কর্মহানির ঘটনা ঘটবে, কারণ আগামী দশকগুলােতে এই ক্ষেত্রগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই এই ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযােগ তৈরি করতে হবে। অন্য ক্ষেত্রগুলিতে সুপরিকল্পিত পুনর্দক্ষতায়ন ও দক্ষতায়ন কর্মসূচি কর্মহানি রােধ করতে পারে। তা ছাড়া সময়ােপযােগী পুনর্দক্ষতায়ন ও পুনপ্রশিক্ষণ অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের বিকল্প আয়ের সুযােগ তৈরি করে দিতে সহায়তা করবে। র্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে উপযুক্ত বিনিয়ােগের দ্বারা সমর্থিত সুপরিকল্পিত পরিকাঠামাে প্রকল্পগুলি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য বিরাট ভাবে লাভজনক হতে পারে।

৪.8. ন্যায্য অতিক্রমণে রাজস্ব প্রতিস্থাপন ও বিনিয়ােগ: রাজ্য সরকারগুলােকে যেমন রাজস্বের টাকা দিয়ে ন্যায্য অতিক্রমণের অর্থসংস্থানে একটা ভূমিকা নিতে হবে, তেমনই কেন্দ্রকে জীবাশ্ম । জ্বালানি থেকে পাওয়া সরকারি রাজস্ব প্রতিস্থাপনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এই প্রসঙ্গে ডিএমএফ তহবিল ও জিএসটি ক্ষতিপূরণ কর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কয়লার উপর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। কর হল জিএসটি ক্ষতিপূরণ সেস (যা প্রথমে বসানাে হয়েছিল কয়লার সেস হিসেবে, সবুজ শক্তিতে। অতিক্রমণের টাকা জোগাড়ের জন্য)। এর পরিমাণ প্রতি টন কয়লা ও লিগনাইট প্রেরণের উপর ৪০০ টাকা। ২০১৯-২০ সালে এর থেকে উঠেছিল মােটের উপর ৪০,০০০ কোটি টাকা। তবে ২০২২ সালে। এই সেসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, এবং সেই সুযােগে এই সেসকে কয়লা সেসে রূপান্তরিত করে যাতে শুধুই কয়লা খনি এলাকায় ন্যায্য অতিক্রমণের কাজে লাগানাে হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই। ভাবে স্থাননির্ভর বিনিয়ােগের জন্য যে ডিএমএফ তহবিল আছে, তাকে যুক্ত করতে হবে ন্যায্য অতিক্রমণের বিনিয়ােগের সঙ্গে, কয়লা খনি-বহুল জেলাগুলিতে যার এখনকার ক্রমবর্ধিত পরিমাণ হল ১৮,৫০০ কোটি টাকা

৪.৫. দায়িত্বশীল সামাজিক ও পরিবেশগত ব্যবস্থাগ্রহণ: ন্যায্য অতিক্রমণের মধ্যে থাকতে হবে দায়িত্বশীল সামাজিক ও পরিবেশগত কাজকর্ম। আর এর মাধ্যমে সম্পদের অভিশাপের উল্টোপথে যাত্রার সুযােগ যেমন নিতে হবে, তেমনই মানুষ, সরকার ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে এক নতুন পরিবেশ ও সামাজিক চুক্তি তৈরি করতে হবে।

বছরের পর বছর ধরে সম্পদের ব্যবহার ডেকে এনেছে দূষণ, ধ্বংস করেছে বাস্তুতন্ত্র, আর বড় আকারের বাসস্থানচ্যুতি ঘটিয়ে বঞ্চিত করেছে স্থানীয় মানুষকে। ফলে অনেক জীবাশ্ম জ্বালানি অঞ্চল (বিশেষ করে কয়লার) থেকে গেছে দরিদ্র ও অনুন্নত। তা ছাড়া স্থানীয় মানুষের মধ্যে এসেছে। বিচ্ছিন্নতাবােধ, আর সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাঁদের কোনও ভূমিকাই থাকেনি। নতুন চুক্তি’তে এই বিষয়গুলােও থাকতে হবে, এবং নিশ্চিত করতে হবে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে সিদ্ধান্তগ্রহণ, দারিদ্র দূরীকরণ, আয়ের আরও ন্যায্য বণ্টন, সামাজিক স্তরে মানব উন্নয়ন ও সামাজিক পরিকাঠামােয় বিনিয়ােগ, এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা ও পরিবেশের পুনরুদ্ধার। এর ফলে স্থায়ী জীবিকার ব্যবস্থা হবে ও। আয়ের সুযােগ বাড়বে।

পরের তিন থেকে চার দশকে ন্যায্য অতিক্রমণের পরিকল্পনা করতে হবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৌশলগত হস্তক্ষেপ হিসেবে। এমন অতিক্রমণ তাড়াহুড়াে করে কার্যকর করা যায় না। এমন একটা দীর্ঘমেয়াদি রােডম্যাপ তৈরি করতে হবে যার মধ্যে একদিকে যেমন নিঃসরণ কমানাের লক্ষ্য থাকবে, তেমনই থাকবে হাতের নাগালে-থাকা সুযােগগুলাে কাজে লাগানাের ব্যবস্থা। এই ভাবে এগােলে এমন রূপান্তরকারী পরিবর্তন আসবে যার মধ্যে সবাই অন্তর্ভুক্ত হবে, যা ন্যায্য হবে, এবং সেই সঙ্গে কার্যকরও হবে।


[১] পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তিভিত্তিক উৎসগুলি দ্রুত উঠে আসছে।

[১.১] ই মােরেনা, ডি ক্রাউজ ও ডি স্টেভিস (সম্পাদক), জাস্ট ট্রানজিশনস: সােশ্যাল জাস্টিস ইন দ্য শিফট টুওয়র্ডস আ লাে-কার্বন ওয়র্ল্ড (লন্ডন: প্লুটো প্রেস, ২০১৯)।

[২] ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট, সাসটেনেবিলিটি, অ্যান্ড টেকনােলজি (আইফরেস্ট), নয়া দিল্লি ২০২১।

[৩] ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া।”

[৪] ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া।”

[৫] ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া।”

[৬] ভূষণ ও এস ব্যানার্জি, “ফাইভ আর’স: আ ক্রস-সেকটোরাল ল্যান্ডস্কেপ অফ জাস্ট ট্রানজিশন ইন ইন্ডিয়া।”

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.