Author : Abhijit Singh

Published on Jun 07, 2024 Updated 0 Hours ago

লক্ষদ্বীপে একটি নতুন নৌঘাঁটি অংশীদার এবং প্রতিপক্ষের জন্য একটি সংকেত যে ভারত পূর্ব ভারত মহাসাগরে প্রধান শক্তি হিসাবে অবস্থান করছে

সমুদ্রে এক সান্ত্রী

৬ মার্চ, ভারত আইএনএস জটায়ুকে লক্ষদ্বীপ গোষ্ঠীর মিনিকয়ে কমিশন করে। 'জটায়ু' হল রামায়ণের পৌরাণিক বিহঙ্গ যিনি সীতার অপহরণ রোধ করার চেষ্টা করেছিলেন। যিনি নতুন ঘাঁটি উদ্বোধন করেছিলেন সেই নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল হরি কুমারের কথায়, “জটায়ু ছিলেন 'প্রথম প্রতিক্রিয়াশক্তি', যিনি সীতাজির অপহরণ রোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, এমনকি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও, এবং স্বয়ংসেবার উদাহরণ তৈরি করেছিলেন।" তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে এটি "নিরাপত্তা নজরদারি এবং নিঃস্বার্থ সেবা প্রদানের চেতনার একটি উপযুক্ত স্বীকৃতি"।


এডেন উপসাগর এবং আরব সাগরে জলদস্যুদের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা এবং লোহিত সাগরে হুথি হামলার সময় আইএন এই দ্বীপে বিদ্যমান সুবিধাকেন্দ্রটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে উন্নীত করতে এগিয়েছে।



ঘটনাটি ভারতীয় নৌবাহিনীর (আইএন) জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে, যারা ভারত মহাসাগরে প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চায়৷ ভারত মহাসাগরের প্রধান শিপিং লেনগুলিতে অবস্থিত — সেখান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং প্যাসেজ নয়-ডিগ্রি চ্যানেল গিয়েছে — মিনিকয়ের এতদিন একটি নৌ-‌বিচ্ছিন্নতা ছিল৷ এডেন উপসাগর ও আরব সাগরে জলদস্যুদের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা এবং লোহিত সাগরে হুথি হামলার সময় আইএন এই দ্বীপে বিদ্যমান সুবিধাকেন্দ্রটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে উন্নীত করতে এগিয়েছে। নৌবাহিনীর কার্যক্ষমতা পরিকল্পনাকারীরা বিশ্বাস করেন যে মিনিকয়ে একটি নজরদারি ফাঁড়ি সমুদ্রতীরে অবৈধ কার্যকলাপ ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে, এবং সামুদ্রিক দূষণ ও অবৈধ মাছ ধরার মতো বিপদের দিকেও নজর রাখবে।

তবে, জটায়ু সমুদ্রে সতর্কতা বজায় রাখার চেয়ে বেশি কিছু। ঘাঁটিটির লক্ষ্য ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযানগত নাগাল বাড়ানো, দ্রুত বাহিনী মোতায়েন সক্ষম করা, এবং কৌশলগত উপস্থিতি বজায় রাখা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিনিকয় নৌ-সুবিধাকেন্দ্রকে আরব সাগর এবং তার বাইরে সরবরাহ ও সহায়তা কার্যক্রমের জন্য একটি নোডাল পয়েন্টে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, কাভারত্তি দ্বীপে
আইএনএস দ্বীপপ্রাক্ষকের পরে জটায়ু হল লক্ষদ্বীপের দ্বিতীয় নৌ-‌ঘাঁটি। শিপিংয়ের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকির সময়ে মিনিকয়-এ একটি নতুন ঘাঁটি ভারতীয় নৌবাহিনীকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপটে একটি প্রয়োজনীয় অগ্রবর্তী ফাঁড়ি রাখার ব্যবস্থা করে।

নতুন ঘাঁটি ভারতের প্রতিবেশীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায় যে ভারতীয় নৌবাহিনী ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম। বিশেষ করে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপকরা মলদ্বীপের ওপর কড়া নজর রেখেছেন। মালে নয়াদিল্লিকে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে অবস্থানরত ভারতীয় সামরিক কর্মীদের একটি দল
প্রত্যাহার করার জন্য বলার পর আইএন আরব সাগরে বৃহত্তর চিনা উপস্থিতির সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে, চিনা গবেষণা জাহাজ জিয়াং ইয়াং হং ০৩-কে মলদ্বীপের বন্দরে নোঙর ফেলার অনুমতি দেওয়ার জন্য মালের পদক্ষেপ ভারতের সঙ্গে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মলদ্বীপ ও চিন একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা মালেকে বিনামূল্যে চিনা সামরিক সহায়তা প্রদান করে। নয়াদিল্লিতে অনেকের কাছে বেজিং-এর মালেতে পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্য ভারত এবং ভারতীয় কর্তৃত্বকে আহত করা এবং তার নিজস্ব বাড়ির উঠোনে প্রভাব নষ্ট করা।


মালে নয়াদিল্লিকে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে অবস্থানরত ভারতীয় সামরিক কর্মীদের একটি দল প্রত্যাহার করার জন্য বলার পর আইএন আরব সাগরে বৃহত্তর চিনা উপস্থিতির সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক ছিল।



নিশ্চিতভাবে বলা যায়, জটায়ুর কমিশনিং করার মধ্যে কৌশলগত মাত্রার চেয়েও বেশি কিছু আছে। ভারত এই অঞ্চলে সক্ষমতা তৈরি করতে এবং উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে আগ্রহী। নতুন ঘাঁটির উদ্বোধনের ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য যথেষ্টভাবে পরিকাঠামো বৃদ্ধি, সম্ভাব্য যোগাযোগ, সরবরাহ ও সহায়তা সুবিধাগুলি বৃদ্ধি পেতে পারে। কারও কারও বক্তব্য, জটায়ুর স্থানীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের নৌ-‌পরিকল্পনাবিদরা নতুন ঘাঁটির জন্য তাঁদের পরিকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশগত স্থিতিশীলতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী।

লক্ষদ্বীপে নয়াদিল্লির নিরাপত্তা পদক্ষেপগুলি অন্য কোনও বিবেচনার দ্বারা অনুপ্রাণিত। সম্প্রতি, মলদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী মলদ্বীপের ইইজেড-এ একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা আটক করেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে দ্বিতীয়বার ভারতীয় জেলেদের মলদ্বীপের জলসীমায় অবৈধ প্রবেশের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ যদিও ভারতীয় জেলেদের মাছের সন্ধানে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমুদ্রে বিপথগামী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, মালে তার ইইজেড-এ বিদেশী মাছ ধরার নৌকা এবং উপকূলরক্ষীদের অনুপ্রবেশের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল।

তা সত্ত্বেও লক্ষদ্বীপে ভারতের পদক্ষেপের মূল কারণটি মূলত ভূ-রাজনৈতিক বলে মনে হয়। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর মধ্যে চিনপন্থী ঝোঁক স্পষ্ট হওয়ার ফলে নয়াদিল্লির ধৈর্য ক্ষীণ হয়ে আসছে। মালের সাম্প্রতিক ভারত-বিরোধী পদক্ষেপগুলি ভারতীয় সিদ্ধান্ত-নির্মাতাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে মুইজ্জু প্রশাসন চিনের সুবিধার উপযোগী পথে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চায়, যা নয়াদিল্লির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।


নতুন ঘাঁটির উদ্বোধনের ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো বৃদ্ধি, সম্ভাব্য যোগাযোগ, সরবরাহ এবং সহায়তা সুবিধাগুলি বৃদ্ধি পেতে পারে।



এসব সত্ত্বেও, মলদ্বীপের উত্তরতম প্রবালপ্রাচীর থেকে মাত্র ১২৫ কিমি দূরে মিনিকয়-এ একটি নৌ-‌ঘাঁটি চালু করার সিদ্ধান্তটি সাবধানে বিবেচনা করা প্রয়োজন বললে কম বলা হয়। একটি বিষয় হল, ভারতের বিদেশনীতি প্রতিষ্ঠানে একটি দীর্ঘস্থায়ী ঐকমত্য ছিল যে নিজের দ্বীপ অঞ্চলগুলিকে অত্যধিক সামরিকীকরণ করা থেকে নয়াদিল্লির বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি ভারতের প্রতিবেশীদের বিরক্ত করতে পারে। সেই ধারণা এখন আর প্রচলিত নেই। নয়াদিল্লি তার সামুদ্রিক প্রতিবেশী অঞ্চলে আরও পেশীবহুল উপস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, যার কারণ  প্রধানত চিনা সম্প্রসারণবাদ। এর ফলে দ্বীপ অঞ্চলগুলিকে সামরিকীকরণের ক্ষেত্রে আজ আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী প্রয়াস দেখা যাচ্ছে৷ তবুও, লক্ষদ্বীপে একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সুবিধাকেন্দ্র তৈরির বিষয়টি জটিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নয়াদিল্লির জন্য সমস্যা মিনিকয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ নয়; চ্যালেঞ্জ হল — যেমন অনেক সামুদ্রিক বিশ্লেষক প্রত্যয়িত করবেন — একটি ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস প্রতিপালন করা এবং বজায় রাখা। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে একটি দ্বীপে, যেখানে এমনকি
তাজা জলও একটি দুর্লভ সম্পদ, একটি সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখা অবশ্যই এক কঠিন উদ্যোগ। একটি ছোট দ্বীপে নজরদারি বিমান এবং ফাইটার জেটের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র-‌সহ একটি এয়ারফিল্ড তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন। সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো তৈরি করা — যেমন কর্মীদের জন্য আবাসন, স্টোরেজ সুবিধা এবং একটি ছোট দ্বীপে ভূগর্ভস্থ জ্বালানি ডাম্প গড়া — কাজটিকে জটিল করে তোলে। তার উপর আছে মিনিকয়ের ভঙ্গুর বাস্তুশাস্ত্র, যা নিশ্চিতভাবে আরও বাধা সৃষ্টি করবে।


ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে একটি দ্বীপে, যেখানে এমনকি তাজা জলও একটি দুর্লভ সম্পদ, একটি সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখা একটি কঠিন উদ্যোগ।



আপাতত, মিনিকয়ে নৌ-‌বিচ্ছিন্নতা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নৌ-‌ঘাঁটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র প্রাপ্তির পর দ্বীপে কৌশলগত পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। এটি তর্কযোগ্যভাবে একটি দ্বীপে ফাঁড়ি স্থাপন করার একটি বুদ্ধিসম্মত উপায়। যদি মিনিকয়-এ একটি নৌ ঘাঁটি তৈরি করতেই হয়, তাহলে একটি ক্রমিক (‌ইনক্রিমেন্টাল)‌ পদ্ধতি হল সবচেয়ে ব্যবহারিক ও সাশ্রয়ী উপায়। উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে জটায়ুর কৌশলগত সুবিধাগুলি অনস্বীকার্য। এটি উপকূলে নজরদারি সহজতর করবে এবং সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং ফলপ্রসূ হয় কিনা তা দেখা অবশ্য বাকি রয়েছে।




অভিজিৎ সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.