Published on May 31, 2024 Updated 0 Hours ago

নতুন সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে দারিদ্র্য মোকাবিলা করে ইইউ এই অঞ্চলের সঙ্গে একটি সুসং পারস্পরিক ভাবে উপকারী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে।

রাশিয়া ও চিনের প্রভাব মোকাবিলায় ইউরোপ-মধ্য এশীয় কৌশল

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব যখন তার দ্বিতীয় বার্ষিকী অতিক্রম করছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং সেন্ট্রাল এশিয়ান রিপাবলিক বা মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলি (সিএআর) ভূ-রাজনৈতিক ভূ-অর্থনৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব-সহ সরবরাহ শৃঙ্খল সংক্রান্ত একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা মোকাবিলা করছে। এই ধরনের অসুবিধার মাঝেই দুই অঞ্চলের মধ্যে ‘স্থিতিশীল পরিবহণ সংযোগ-এউদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ইনভেস্টর ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ইউরোপীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা সমর্থিত ফোরামটি সংযোগের জন্য ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এই ভাবে নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংযোগের জন্য উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের অভিমুখে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’কে চিহ্নিত করে।

 

ছবি ১: প্রস্তাবিত ট্রান্স-ক্যাস্পিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট করিডোর (টিআইটিআর)

 

সূত্র: লেখকের নিজস্ব

ফোরামটি ট্রান্স-ক্যাস্পিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট করিডোর (টিআইটিআর) বা মিডল করিডোরে অত্যধিক প্রয়োজনীয় গতিশীলতা প্রদান করে, যার লক্ষ্য কৃষ্ণসাগর ককেশাস অঞ্চলের মাধ্যমে ইউরোপকে সিএআর-এর সঙ্গে সংযুক্ত করা। এই নিবন্ধটিতে প্রস্তাবিত করিডোরের কৌশলগত ভূ-অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং কী ভাবে এটি চিনা ও রুশ প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য ইইউ এবং সিএআর-এর আঞ্চলিক কৌশলে মূল ভূমিকা পালন করে, তা-ও দর্শানো হয়েছে

 

গ্লোবাল গেটওয়ে: মধ্য এশিয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবকাঠামো সংক্রান্ত নির্দেশিকা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্লোবাল গেটওয়ে - যা ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল -আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল অবকাঠামো এবং সংযোগ উদ্যোগের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। ২০২১ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে এ ক্ষেত্রে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ব্রাসেলসের লক্ষ্য হল বিশ্ব প্রশাসন সংক্রান্ত আখ্যানকে আকার দেওয়া এবং একাধিক বৃহৎ শক্তির বিশ্বে তার অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। এই উদ্যোগের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা মধ্য এশিয়ায় প্রকল্প চালু করেছে। ইইউ-মধ্য এশিয়ার জন্য সাম্প্রতিক গ্লোবাল গেটওয়ে ইনভেস্টর ফোরাম টিআইটিআর এবং সিএআর-এর সঙ্গে অবকাঠামো উন্নতি ঘটাতে ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। এই উচ্চাভিলাষী বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনটি ইউরোপীয় কমিশন দ্বারা পরিচালিত একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ সমীক্ষা দ্বারা সমর্থিত, যার নামকরণ করা হয়েছে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে স্থিতিশীল পরিবহণ সংযোগ সংক্রান্ত অধ্যয়ন গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে যে, সংযোগপথ বরাবর বিদ্যমান কাঠামো প্রয়োজনীয় ৩৩টি অবকাঠামোর সংস্কারের জন্য একটি পথনির্দেশিকা-সহ টিআইটিআর-এর সম্পূর্ণ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

 

ইইউ-মধ্য এশিয়ার জন্য সাম্প্রতিক গ্লোবাল গেটওয়ে ইনভেস্টর ফোরাম টিআইটিআর এবং সিএআর-এর সঙ্গে অবকাঠামো উন্নতি ঘটাতে ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে।

 

২০১৪ সালে সূচিত টিআইটিআর ৪২৫০ কিলোমিটারের বেশি রেললাইন এবং ৫০০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ নিয়ে গঠিত। ২০১৭ সালে বাকু-তিবিলিসি-কারস রেললাইনের সূচনার পাশাপাশি টিআইটিআর রাশিয়ার উত্তর করিডোরের চেয়ে ২০০০ কিমি ছোট, যা এটিকে আরও অর্থনৈতিক এবং অনুমোদনের সম্মতির সমস্যাগুলির জন্য একটি আদর্শ সমাধান করে তুলেছে। করিডোরটি সামুদ্রিক পথের মাধ্যমে প্রায় এক মাসের তুলনায় ইউরোপ এশিয়ার মধ্যে ভ্রমণের সময় ১৫ দিনে কমিয়ে আনতে সক্ষম টিআইটিআর সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আশাব্যঞ্জক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪৯০০০টি পণ্যবাহী ট্রেন এই পথে যাতায়াত করেছে, যার বার্ষিক বৃদ্ধি হল ৯২.৭ শতাংশ। ২০২১ সালে পথটিতে ১৫১৮৩টি কন্টেনার ট্রেনের মাধ্যমে ১.৪৬৪ মিলিয়ন ২০ ফুট সমতুল্য ইউনিট পণ্যসম্ভার পরিবহণ করা হয়েছিল, যা যথাক্রমে ২২.৪ শতাংশ ও ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ সালে কন্টেনার ট্র্যাফিকের পরিমাণ ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশগুলি ২০২৫ সালের মধ্যে পথের ধারণক্ষমতা ১০ মিলিয়ন টন পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে আগ্রহী এবং উপযুক্ত বিনিয়োগ ও নীতি বাস্তবায়িত হলে করিডোরটি ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি করতে পারবে।

 

ভূ-কৌশলগত এবং ভূ-অর্থনৈতিক যুক্তি

চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) বিপরীতে ইইউ কার্যকরী ক্ষমতা, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং আঞ্চলিক সমন্বিতকরণ বৃদ্ধি করার জন্য সমস্ত সিএআর-এর মধ্যে সংযোগ বাড়াতে চায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং মহাদেশটি এখনও রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি সংক্রান্ত ক্ষতির সঙ্গে যুঝছে। ২০২২ সালে ইইউ সাদার্ন গ্যাস করিডোরের মাধ্যমে ক্যাস্পিয়ান সাগর থেকে গ্যাস ক্রয় করার জন্য ককেশীয় দেশগুলির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যদিও সরবরাহটি রাশিয়ার সরবরাহ প্রতিস্থাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল না, তা সত্ত্বেও এটিকে কৌশলগত পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়েছিল। সিএআর-এর সমৃদ্ধ হাইড্রোকার্বন ভাণ্ডারে প্রবেশাধিকারের জন্য এই বিনিয়োগের কৌশলগত পদক্ষেপগুলি অপরিহার্য। পাঁচটি সিএআর-এ ৪৮ বিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ২৯২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রমাণিত ভাণ্ডার রয়েছে। হাইড্রোকার্বনের আরও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ পেতে ব্রাসেলস ইউরেশিয়ার কেন্দ্রস্থলে বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করতে তার অত্যাধুনিক বেসরকারি ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে চায়।

 

সিএআর-এর সমৃদ্ধ হাইড্রোকার্বন ভাণ্ডারে প্রবেশাধিকারের জন্য এই বিনিয়োগের কৌশলগত পদক্ষেপগুলি অপরিহার্য।

 

ইইউ এবং সিএআর-এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান অভিন্নতা উভয় ব্লকের জন্য দ্বিমুখী জয়ের পরিস্থিতিসম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে জোরদার করে, এর সরবরাহ শৃঙ্খল রক্ষা ( বৈচিত্র্যময়) করে এবং এই অঞ্চলে ভৌত সংযোগ বৃদ্ধি করে। সিএআর-এর জন্য ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন তাদের মস্কোর উপর নিরাপত্তা অর্থনৈতিক নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। সিএআর এই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল যে, মস্কো তাদের স্থিতিশীলতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। একই ভাবে স্বাধীনতার পর সিএআর স্বীকার করেছে যে, চিনের সঙ্গে বর্ধিত সম্পৃক্ততা অনেক সুযোগের সৃষ্টি করেছেযাই হোক, একই সময়ে এই অঞ্চলে চিনা আধিপত্যবাদী অন্বেষণ অবিশ্বাসকে উস্কে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তাজিকিস্তান এবং কিরঘিজস্তানের কথা, যেখানে তাদের বৈদেশিক ঋণের অর্ধেকেরও বেশি বেজিংয়ের কাছ থেকে নেওয়া। কাজাখস্তানের জিডিপি ৬.৫ শতাংশের কম হলেও উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান এখনও চিনের কাছে যথাক্রমে ১৬ শতাংশ এবং ১৬.৯ শতাংশ অর্থের কারণে ঋণী। যদি তারা ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, চিন ইতিমধ্যেই কিরঘিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের মতো দরিদ্রতম দেশগুলিকে বিআরআই প্রকল্পগুলিতে বৃহত্তর সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য চুক্তিতে ধারা সংযোজন করতে বাধ্য করেছে।

বিআরআই-এর অধীনে চিনা বিনিয়োগগুলি সিএআরগুলিতে চিনা শ্রমিকদের একটি বড় প্রবাহের সাক্ষী থেকেছে, যা ফলস্বরূপ সরকারি উদাসীনতা চিনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহিংস সংঘর্ষকে উস্কে দিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে চিনাদের বিরুদ্ধে ১৫০টি বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে, বিশেষ করে কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান এবং তাজিকিস্তানেএবং জিনজিয়াং-এর মুসলমানদের দমন চিন বিরোধী মনোভাবকে উস্কে দিয়েছে। রাশিয়ার দৃঢ় বৈদেশিক নীতি চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পাশাপাশি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য এবং ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিকল্প সংযোগ প্রকল্পগুলি অন্বেষণ করার জন্য সিএআর বিভিন্ন অংশীদারিত্বের সন্ধান করছে।

 

বিআরআই-এর অধীনে চিনা বিনিয়োগগুলি সিএআরগুলিতে চিনা শ্রমিকদের একটি বড় প্রবাহের সাক্ষী থেকেছে, যা ফলস্বরূপ সরকারি উদাসীনতা চিনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহিংস সংঘর্ষকে উস্কে দিয়েছে।

 

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা জোরদার করেছে, যার প্রমাণ উচ্চ পর্যায়ের সফর থেকেও স্পষ্ট। ইইউ-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল গ্লোবাল গেটওয়ে ইনভেস্টর ফোরামের সময় যথার্থই বলেছেন, মধ্য এশীয় অঞ্চল বিশ্ব মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠছে। তা সত্ত্বেও, এই অঞ্চলের প্রতি ইইউ-এর নীতি একটি নতুন বাস্তববাদী কর্মসূচি দ্বারা চালিত এবং একটি বহুমুখী বিশ্বে সিএআর-এর ক্রমবর্ধমান ভূমিকার স্বীকৃতিকেই প্রতিধ্বনিত করেএখন প্রশ্ন হল, কী ভাবে সিএআর আঞ্চলিক সমন্বিতকরণকে গুরুত্ব সহকারে নেবে, আঞ্চলিক বিরোধগুলির মোকাবিলা করবে, জনবান্ধব সাংবিধানিক সংস্কারের উপর ভিত্তি করে স্থিতিস্থাপক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে এবং এ ভাবে আইনের শাসন ক্রমান্বয়ে গণতন্ত্রের উন্নতি ঘটাবে। নতুন সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে দারিদ্র্য মোকাবিলা করে ইইউ এই অঞ্চলের সঙ্গে একটি সুসংত এবং পারস্পরিক ভাবে উপকারী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে।

 


আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।

পৃথ্বী গুপ্ত অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জুনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Ayjaz Wani

Ayjaz Wani

Ayjaz Wani (Phd) is a Fellow in the Strategic Studies Programme at ORF. Based out of Mumbai, he tracks China’s relations with Central Asia, Pakistan and ...

Read More +
Prithvi Gupta

Prithvi Gupta

Prithvi works as a Junior Fellow in the Strategic Studies Programme. His research primarily focuses on analysing the geoeconomic and strategic trends in international relations. ...

Read More +